এম শাহরিয়ার তাজয় ::নানা প্রজাতির মাছ এবং বন্য প্রাণীর প্রজন মৌসুম তাই এর বংশ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের লক্ষে দীর্ঘ তিন মাস সরকারি ভাবে বন্ধ ঘোষণা করে বন মন্ত্রণালয়।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আজ রবিবার থেকে উন্মুক্ত হয়েছে ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। সামনে পর্যটক মৌসুম এবং জেলেদের মাছ আহরণের সঠিক সময় তাই বনের প্রবেশ প্রত্যাহার করায় সকাল থেকেই জেলেরা বনে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে, বনের সৌন্দর্যের লীলাভূমি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদেরও। পর্যটক আগমনের জন্য নতুন সাজে সাজিয়েছে নৌযান, প্রস্তুত বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ অন্যান্য পর্যটক স্পটগুলো। রাজনৈতিক অস্থিরতা আর আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে পিছনের লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে জানায় ট্যুর ব্যবসায়ীরা।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে যে কাউকে। মোংলা বন্দরের কোল ঘেঁষা সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ। যে দিকে চোখ যায় শুধু বন আর বন। বনের অপরুপ সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণীদের ডাক আর সুন্দরবনের রঙ-বেরঙের পাখীদের কলকাকলীতে মুগ্ধ করে পর্যটকদের।
এ বনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির আর চিত্রা হরিণসহ নানা স্থল ও জলজ প্রাণীর আশ্রয় স্থল। মাছ ও বন্যপ্রাণী প্রজনন মৌসুম তাই এর বংশ বৃদ্ধির লক্ষে তিন মাসের জন্য বনের নদী-খালে মাছ আহরণ ও পর্যটক প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দেশী-বিদেশী দর্শনার্থী শূন্য হয়ে পড়ে গোটা সুন্দরবন। জেলেরা হয়ে পরে বেকার, ফলে কমে যায় সরকারি রাজস্বও।
বন্ধের পরে ১ সেপ্টেম্বর রবিবার থেকে আবারও বনের নদী-খালে মাছ ধরার জন্য জাল-নৌকা আর সরঞ্জাম নিয়ে প্রবেশ করছে জেলেরা। বনের স্পটগুলোতে প্রবেশ করতে শুরু করছে পর্যটকরাও। সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, আন্দারমানিক, দুবলা, কটকা, কচিখালী, নীলকমলসহ সমুদ্র তীরবর্তী ও বনাঞ্চলের সবক’টি পর্যটক স্পটে দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে এক ধরনের মিলন মেলায় পরিণত হবে। সে জন্যই নতুন সাজে সাজিয়ে রেখেছে পর্যটক স্পটগুলো। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সতর্ক অবস্থায় প্রস্তুত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বনবিভাগ।
দি-সাউদার্ন ট্যুর এর পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে পর্যটক বহনকারী ট্যুর ব্যবসায়ীদের। গত তিন মাস কর্মচারীদের বেতন, নৌযান সচল রাখাসহ অন্যান্য দিকে প্রচুর খরচ হয়েছে। তাই এবারে আশা করা যাচ্ছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা আর আবহাওয়া অুনকুলে থাকেল দুই থেকে তিনগুণ বাড়বে দর্শনার্থী সংখ্যা, আর পূর্বের লোকসানের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে ট্যুর ব্যবসায়ীরা।
বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটক স্পট সুন্দরবন করমজল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, গেল ঘূর্ণিঝড় রেমালে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনে। গত তিন মাস বনে মাছ ধরা ও পর্যটক প্রবেশ বন্ধ থাকায় কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন।
রবিবার ১ সেপ্টেম্বর থেকে বনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। সুন্দরবনের করমজলসহ অন্যান্য পর্যটক স্পটগুলোতে দেশ-বিদেশী দর্শনাথীদের ভ্রমণের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বন বিভাগ। দর্শনার্থীদের আগমন এবং নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি বন রক্ষীরাও প্রস্তুত রয়েছে। আশা করছি দেশ-বিদেশী পর্যটকরা নিরাপদে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপবোগ করতে পারবেন।
গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ ও বনের নদী-খালে মাছ ধরা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বন বিভাগ।