💥 সূর্যগ্রহণ :
চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীর কোনো দর্শকের কাছে সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এই ঘটনাকে সূর্যগ্রহণ বলা হয়। আরবিতে এর নাম কুসূফ, আর ইংরেজিতে একে Solar Eclipse বলা হয়। পৃথিবীতে প্রতি বছর অন্তত দুই থেকে পাঁচটি সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। এর মধ্যে শূন্য থেকে দুইটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়।
🌘 চন্দ্রগ্রহণ :
পৃথিবী তার পরিভ্রমণ অবস্থায় চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এলে কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করতে থাকে। তখন পৃথিবী থেকে দেখা যায় যে চাঁদ অদৃশ্য হয়ে গেছে বা আংশিক ঢাকা পড়েছে। এটাকে চন্দ্রগ্রহণ বলে। আরবিতে এর নাম খুসূফ, ইংরেজিতে একে Lunar Eclipse বলে।
🔘 আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত প্রকৃতির নিয়মেই চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ ঘটে। দুনিয়ার কারো জন্ম-মৃত্যু বা বিশেষ কোনো ঘটনার কারণে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর যখন চক্ষু স্থির হবে * চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে। এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে।”
(সুরা কিয়ামাহ : আয়াত ৭-৯)
উল্লেখিত আয়াতে ‘চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে পড়া’র বাস্তব রূপই হচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ।
চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নির্দেশনা:
হযরত মুগিরা ইবনে শু’বা ( রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন-১. তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।২. তাঁর বড়ত্বের ঘোষণা করবে আর৩. নামাজ আদায় করবে।৪. সাদকা প্রদান করবে।
(বুখারি ও মুসলিম)
জাহেলি যুগে চন্দ্রগ্রহণ কিংবা সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা ছিল। তারা মনে করত দুনিয়ায় বড় বড় ব্যক্তিত্বের অধিকারী লোকদের কোনো অঘটন ঘটলে এসব হয়। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছেলে ইবরাহিম-এর মৃত্যুর দিনে সুর্যগ্রহণ হয়। তখন সাহাবায়ে কেরাম তা বলাবললি করছিল। তা শুনে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে তাদের নিকট সুস্পষ্ট বর্ণনা দেন। যা পূর্বের হাদিসে উল্লেখ করা হলো।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ”সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদর (ক্ষমতার) বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ হয় না। অতঃপর যখন তোমরা চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ দেখতে পাও, তখন-
১. তাকবির (আল্লাহু আকবার) বল।
২. আল্লাহর কাছে দোয়া কর।
৩. নামাজ আদায় করা।
৪. দান-সদকা কর। (মুসলিম)
হাদিসের নির্দেশনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, চন্দ্র ও সূর্য মহান আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। আর তাতে গ্রহণ লাগা আল্লাহ তাআলার হুকুমেই হয়। তাদের নিজস্ব কোনো শক্তি বা ক্ষমতা নেই। আল্লাহ তাআলার হুকুমের অধীনেই তাদের চলাচল এবং কার্যক্রম।
সূর্য কিংবা চন্দ্র গ্রহণ লাগলে মুসলমানের জন্য করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনাও হাদিসে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং চন্দ্রগ্রহণের এ সময়ে বেশি বেশি দোয়া করা, তাসবিহ পড়া, তাওবাহ-ইসতেগফার করা, নামাজ পড়া এবং দান-সাদকা করা অবশ্য কর্তব্য।
এ সময় অযথা অনর্থক গল্প-গুজব, হাসি-তামাশায় সময় অতিবাহিত না করে অন্তরে মহান আল্লাহর প্রতি ভয় রাখা জরুরি। কেননা এসবই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য সতর্কতা। অনেক হাদিসে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণকে বিশেষ বিপদের সময় বা ক্রান্তিকাল বলে গণ্য করা হয়েছে।
চন্দ্রগ্রহণের নামাজ
হাদিসে সূর্যগ্রহণের নামাজের মতো চন্দ্রগ্রহণের নামাজও প্রমাণিত এবং সুন্নাত। এ নামাজ জামাতে বা একাকি উভয়ভাবেই পড়া যায়।
🔘 চন্দ্র, সূর্য বা অন্য কোনো সৃষ্ট বস্তু অদৃশ্যভাবে কারো উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না।
এ ধরনের বিশ্বাস রাখা তাওহীদের পরিপন্থী।
🔘 বাস্তবে সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কিংবা অন্য কারো জন্য কোনো জাগতিক কাজ করা বা না করার বিষয়ে ইসলামে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। সমাজে প্রচলিত সবকিছুই কেবল কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস। এগুলো মানা মারাত্মক গুনাহ।
বরং হাদিসে এসেছে, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন মনে করতে হবে এবং পুরুষদেরকে জামাআতে সালাতুল কুসূফ (সূর্যগ্রহণে) ও সালাতুল খুসূফ (চন্দ্রগ্রহণে) আদায় করতে বলা হয়েছে। এর বাইরে কোনো বিধি-নিষেধ নেই।
কুরআন-হাদীস থেকে প্রমাণ
☀ আল্লাহ বলেন:
“…তোমরা যা কিছু রাসূল তোমাদেরকে দেন, তা গ্রহণ কর এবং তিনি যা কিছু থেকে তোমাদেরকে বিরত করেন, তা থেকে বিরত থাক।”
-সূরা হাশর: আয়াত: ৭
☀ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে এদের গ্রহণ হয় না। তাই যখন তোমরা গ্রহণ দেখতে পাও, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর।”
-সহীহ বুখারী ৪৮১৮; ইফা.
☀ মোট কথা সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণে গর্ভবতী মহিলা বা গর্ভস্থ সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং এগুলো আল্লাহর মহাশক্তির নিদর্শন।
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের কোনো প্রভাব গর্ভবতী মা বা তাঁর গর্ভস্থ ভ্রূণের উপর পড়ে না। গর্ভবতী মা কিছু কাটলে, ছিঁড়লে বাচ্চা ঠোঁটকাটা জন্মাবে, কোনো কিছু ভাঙলে বা বাঁকা করলে সন্তান বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেবে-এ ধরনের সব প্রচলিত ধারণা ভিত্তিহীন – মিথ্যা ও কু-সংস্কার। এর সাথে কুরআন ও হাদিসের কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে বুঝে ইসলামের সকল বিধি-বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করেন।