রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সরকার বিরোধী পোস্টে ‘জুলাই যোদ্ধা’ সাকিবের সর্বনাশ বাদুরের মাংস খায় নারীরা” সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে মানববন্ধন গোপালগঞ্জে দৈনিক কালবেলা প্রত্রিকার প্রতিষ্ঠাবাষীকী পালিত  কোটালীপাড়া জাকের পার্টির জনসভা ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত চাদাঁর টাকা না পেয়ে সংখ্যালঘু পরিবারের উপর হামলা ও লুঠপাট  কোটালীপাড়ায় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত সংবাদ প্রকাশে ক্ষুব্ধ বিআইডব্লিউটিএর প্রকৌশলী, সাংবাদিককে প্রকাশ্যে হুমকি! পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের নিকট স্বারকলিপি প্রদান করেছে জামায়তে ইসলামী দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় জামিয়া হাউয়া লিল-বানাত ও মিশনের মজলিস  রাজউকে বহিষ্কৃত কর্মচারী পরিচয় বদলে গুরুত্বপূর্ণ শাখায় কাজ করছেন

কোটালীপাড়ায় অবৈধভাবে শতাধিক খাল দখল করে মাছ চাষ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৮৩ Time View

কোটালীপাড়ায় অবৈধভাবে শতাধিক খাল দখল করে মাছ চাষ

নিজস্ব প্রতিনিধি:-নিম্নাঞ্চল ও জলাভূমি বেষ্টিত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার প্রায় শতাধিক খালে এক সময় ভরপুর থাকতো বিভিন্ন প্রকার দেশীয় মাছ।দিন দিন এসকল খাল-বিলগুলো দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। যার কারনে দেশীয় এই মাছগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। প্রশাসনের নিরবতার কারনে কিছু কিছু বিএনপি ও আওয়ামী নেতা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খাল দখলের উৎসবে মেতে উঠেছেন।এ কারণে হুমকির মুখে পড়ে বিলুপ্ত হয়ে যেতে বসেছে জীববৈচিত্র্য।

জানাগেছে,উপজেলার অর্ধশত ছোট-বড় বিলের প্রায় শতাধিক সরকারি খালের উপর বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে খাল দখল করে মাছের ঘের বানিয়েছে প্রভাবশালী মহল। অন্যদিকে ব্রিজ নির্মাণ ও খাল খনন কাজের জন্য প্রায় ৩০ টি খাল বছরের পর বছর বাঁধ দিয়ে রাখায় খাল জুড়ে জমাট বেঁধে আছে কচুরীপানা।কচুরিপানা জমে থাকায় পানি বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে খালগুলো।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে শুধুমাত্র উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের কলমুনিয়া খাল,তিতাল বাড়ি খাল,পেত্নীখালী খাল,বাসাখালী খাল,কুমলাবতী খাল,গোদার খাল,পুকুরিয়া খাল,পাথরিয়া খাল, চৌদ্দবুনিয়া খাল,রামমানির খাল,কুইচা মোড়া খাল,চাইর খাল,সিমানার খাল,কাটা খাল, দেওপুরা খালসহ প্রায় ৩০ টি খাল বছরের পর বছর দখল করে রেখেছে বেশকিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি।মৎস্য প্রজেক্টের নামে প্রতিটি প্রজেক্টে এদের এক একজনের রয়েছে ৫০ থেকে ১০০ টি শেয়ার। সাধারণ মানুষের রয়েছে নামমাত্র শেয়ার।এই খাল দখলে বিএনপি নেতা,আওয়ামী লীগ নেতা,ইউপি মেম্বারসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

কোটালীপাড়া উপজেলার রামনগরের বিল, রথিয়ারপাড় বিল,মাছপাড়ার বিল,কুমুরিয়া বিল, বৈকণ্ঠপুর বিল,লখন্ডার বিল,মুশুরিয়ার বিল, পিড়ারবাড়ি বিল,পলোটানা বিল,ধোরাল বিল, চিথলিয়ার বিল,পশ্চিম দিঘলিয়ার বিল,পূর্বপাড়া বিল,চিত্রাপাড়া-শুয়াগ্রাম বিল,সাতুরিয়ার বিল, কান্দি বিল,আশুতিয়ার বিল,পোলশাইল বিল, বর্ষাপাড়া বিল,ছত্রকান্দা বিল,দেওপুরা বিল, সোনাখালি বিল,ফুলবাড়ি বিল,কোনের বাড়ি বিল,বহলতলী বিল,চাটখালির বিল,তারাইল বিল, গোপালপুর বিল,চরগোপালপুর বিল,গৌতমেরা বিল,মাচারতারা বিল,গজালিয়া বিল,তালপুকুরিয়া বিল,হিজলবাড়ি বিল,তারাকান্দর বিল,কুঞ্জবন বিল,পারকোনা বিলসহ প্রায় অর্ধশত ছোট বড় বিল রয়েছে।এ সকল বিলের প্রায় শতাধিক খাল দখল করে নিয়ে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালী মহল।

খালগুলো আবদ্ধ থাকায় পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়ানোতে গোসল ও রান্নার কাজে খালের পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।ফলে দূর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার হাজার হাজার পরিবার এবং খালগুলো হয়ে পড়ছে মাছ শুন্য।বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে দেশীয় মাছ।খালগুলো আটকিয়ে মাছের ঘের করায় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা খাল-বিল থেকে মাছ ধরতে পারছে না।যে কারনে চরম অভাব অনাটনে কাটছে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের সংসার।
অন্যদিকে গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া খালটি খননের জন্য ঘাঘর নদীর মোহনায়,কুশলা ব্রিজের নিচে, ধোরালসহ আরো কয়েক জায়গায় জায়গায় প্রায় ১ বছর ধরে বাঁধ দেওয়া হয়।বছর পার হলেও সামান্য কিছু জায়গা খনন করে বন্ধ রয়েছে খনন কাজ।বর্তমানে বাঁধ দেওয়ার কারনে কচুরীপানায় আটকে বন্ধ হয়ে গেছে পানির প্রবাহ।পুরো খালের পানি পচে যাওয়ায় এই পানি ব্যবহার করতে না পারায় ও মালামাল নিলে খাল দিয়ে চলাচল বন্ধ হওয়ায় সীমাহীন দূর্ভোগে খালপাড় এলাকার বাসিন্দা,ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা।

কোটালীপাড়া-পয়সারহাট খালের গচাপাড়া এলাকায় ব্রিজ নির্মানের জন্য এবং ওয়াবদারহাট এলাকায় স্লুইচ গেট নির্মাণের জন্য দুই স্থানে বাঁধ দিয়ে খাল আটকে রাখায় এই খালেরও একই অবস্থা দেখা দিয়েছে।একই অবস্থা গোপালপুর-পিঞ্জুরী খালের। এই খালের পূর্ণবতী ব্রিজ নির্মাণের জন্য ৩ বছর ধরে বাঁধ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে খালটি।

এছাড়া কালিগঞ্জ,লখন্ডা,টিহাটি,মান্দ্রা,কুশলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০ টি খাল ব্রিজ নির্মানের জন্য বছরের পর বছর বাঁধ দিয়ে আটকে রাখায় চরম সমস্যায় হাজার হাজার জনসাধারণ।মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মৎস্যজীবী ও সাধারণ জনগণ দ্রুত সময়ের মধ্যে দখলকৃত খাল উদ্ধারের দাবি জানিয়ে গত ১৩ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামানের কাছে গণশুনানিতে অভিযোগ জানিয়েছে কয়েকজন ভূক্তভোগী।জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে গত ১৮ আগস্ট খাল উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে কোটালীপাড়ার ইউএনওকে লিখিতভাবে জানানো হলেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গণশুনানীতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মাহফুজ শেখ।
মাহফুজ শেখ বলেন,এসব খাল দখলে রাখার জন্য প্রভাবশালী একটি চক্র কাজ করে।টাকা, প্রভাব যেখানে যা লাগে এই চক্র তাই ব্যবহার করে বছরের পর বছর খালগুলো নিজেদের কব্জায় রেখেছেন।দ্রুত সরকারের উচিত সকল খাল গুলো দখলমুক্ত করে সকলের জন্য উন্মূক্ত করা।

উপজেলার দেওপুরা গ্রামের মৎস্যজীবী মনোজিত বলেন,সারাবছর খাল-বিল থেকে মাছ ধরে আমাদের সংসার চলতো।কয়েক বছর ধরে এলাকার সকল খালগুলো দখল করে মাছের ঘের করায় এখন আমরা আর এসব খাল বিল থেকে মাছ ধরতে পারছি না।যার ফলে আমরা এখন বেকার হয়ে পড়েছি।বহলতলী গ্রামের কলেজ ছাত্র মাসুম শেখ বলেন,এসব খাল উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। মাঝে মাঝে খাল উদ্ধারের নামে চলে লোক দেখানো অভিযান।খাল দখলের কারণে একদিকে নৌ চলাচল ও খালগুলোর আশপাশের এলাকার কৃষকগণের কৃষি কাজ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বিলের পরিবেশ। ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় মাছ ও জীব বৈচিত্র্য।অন্যদিকে দখলকৃত খাল থেকে পূর্বে যে সকল মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা এখন প্রভাবশালীদের বাঁধার মুখে খালগুলো থেকে মাছ ধরতে পারচ্ছেন।যার ফলে এসব মৎস্যজীবীরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

কোটালীপাড়া কল্যাণ সংঘের সভাপতি সোহেল শেখ বলেন,খাল দখল করে মাছ চাষ করায় দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং নৌ চলাচল বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন বিলের নকশা দেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব খাল উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।দখলকারীদের কাছে খাল দখলের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।খালদখল ও উদ্ধার অভিযান নিয়ে কোটালীপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস অফিসার এস এম শাহজাহান সিরাজ বলেন,কোটালীপাড়া উপজেলার বিভিন্ন খালে বাধঁ দিয়ে মাছচাষ করার বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্যস অধিদপ্তরের নজরে এসেছে। এসকল অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করার কারনে দেশীয় মাছের প্রজনন ও বিস্তারের পথে বাধাঁ হয়ে দাড়িয়েছে।দেশীয় মাছের প্রজনন ও উৎপাদন নিশ্চিত করতে এখন থেকে উপজেলা প্রশাসন ও সিনিয়র উপজেলা মৎস্যষ অফিস ও অন্যােন্যব সংশ্লিস্ট দপ্তরকে সাথে নিয়ে নিয়মিত অবৈধ বাধঁ উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে।এ ব্যা পারে বাঁধের অবস্থান সংক্রান্ত তথ্যন দিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে সহযোগীতা করার জন্য তিনি উপজেলার সচেতন জনগণকে আহবান জানান।

কোটালীপাড়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার (অ:দা:) মো: মাসুম বিল্লাহ বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলা একটি নিম্ন জলাভূমি এলাকা। এখানে অধিকাংশ জণসাধারণ কৃষি ও মৎস্য কাজে জড়িত।এই এলাকায় প্রচুর মাছের ঘের রয়েছে।যা মৎস্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। তবে পরিতাপের বিষয় অনেক অসাধু মৎস্য চাষি সরকারি খাল ও ব্রীজের নিচে বাঁধ দিয়ে অবৈধ দখল নিয়ে ঘেরের জায়গা বানিয়ে পানির স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করেন।এর ফলে কৃষির পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির মাছ ও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে অভিযান হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category