সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ নেত্রকোনায় জাতীয় দৈনিক শেষ সংবাদ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ফারুক সাহেবের ওপর হামলার ঘটনা আবারও আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরেছে—সত্য প্রকাশের দায় নিতে গিয়ে সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এই প্রবণতা শুধু ব্যক্তির ওপর নয়, বরং গণতন্ত্র, মুক্ত সাংবাদিকতা ও জনগণের জানার অধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত।
গণমাধ্যম সমাজের আয়না। তারা জনগণের কথা তুলে ধরে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, যখন কোনো সংবাদকর্মী প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অন্যায়, চাঁদাবাজি বা ভূমিদস্যুতার খবর প্রকাশ করেন, তখন তার ওপরই হামলা চালানো হয়। এমন কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক সমাজে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
সাংবাদিকরা ভুল করতে পারেন—তারা মানুষ। কিন্তু ভুলের প্রতিকার আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে হওয়া উচিত, সহিংসতার মাধ্যমে নয়। দেশে প্রেস কাউন্সিল, সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিক সংগঠনসহ নানা সংস্থা আছে, যাদের মাধ্যমে অভিযোগ ও আপত্তি উত্থাপন করা যায়। সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা আইনের আওতায় এনে যাচাই করা যেতে পারে, কিন্তু তাদের ওপর হাত তোলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমরা জোরালোভাবে দাবি জানাই—সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে সকল রাজনৈতিক দল ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান—গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করুন, কারণ একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যমই পারে সমাজে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে।
পরিশেষে, মনে রাখতে হবে—সাংবাদিকদের নিরাপত্তা রক্ষা মানে গণতন্ত্রের নিরাপত্তা রক্ষা। সত্য প্রকাশের পথ রুদ্ধ করে কখনো সমাজকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেওয়া যায় না। তাই এখনই সময়, আমরা সবাই মিলে স্বাধীন, নির্ভীক ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পক্ষে দাঁড়াই।