মীর খায়রু আলম:: সাতক্ষীরার বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে পানি ফল। আগাম চাষকরা ফল বিক্রি করে লাভের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্য ফলের পাশাপাশি পানি ফল বাজার দখল করতে শুরু করায় দিনে দিনে চাহিদা বাড়ছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলটি ছোট বড় সব মানুষের পছন্দের। পানি ফলের আদিনিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও এর প্রথম দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় পানি ফলের বাণিজ্যিক ভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ।
জলাশয় ও বিল-ঝিলে এ ফলটি জন্মে। পানি ফলের এক একটি গাছ প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানি ফলের আরেক নাম ‘সিংড়া’। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ফলচাষ শুরু হয় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এবং ফল সংগ্রহ করা হয় অগ্রহায়ন-পৌষ মাসে। পানিফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ এবং পরিপক্ক হলে কালো রং ধারন করে। ফলটির পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিন্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাসঁ। কাঁচা ফলের নরম শাসঁ খেতে বেশ সুস্বাদু। পানি ফল কাঁচা খাওয়া হয়, তবে সিদ্ধ করেও খাওয়া যায়। কাঁচা পানিফল বলকারক দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের জন্য সহজপাচ্য খাবার। ফলের শুকনো শাঁস রুটি করে খেলে এলার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগ উপশম হয়। পিওপ্রদাহ, উদরাময় ও তলপেটের ব্যথ্যা উপশমে পানিফল খাওয়ায় প্রচলন রয়েছে। বিছাপোকা কামড়ের যন্ত্রনায় থেঁতলানো কাঁচা ফলের প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। পানিফল খুব লাভজনক একটি ফসল। এর উৎপাদন খরচ খুব কম।
সাতক্ষীরা জেলার সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, সদরের আংশিক ও শ্যামনগর উপজেলায় জলাবদ্ধ এলাকার চাষিরা পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ ফলের চাষ। সেই সাথে বাড়ছে ফলটির জনপ্রিয়তা। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এ ফল সারা দেশে ফল হিসেবে পরিচিতি না থাকলেও দিনে দিনে এর চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। পানি চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর দেবহাটাসহ সাতক্ষীরা জেলার চাষীরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মৌসুমে ফল হিসেবে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে ব্যাপক পরিমান চাষ হচ্ছে।
উপজেলার পানিফল চাষি মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, অল্প জমিতে পানিফল চাষ করছি। ভালো ফলন হলে আগামিতে আরও বেশি জমিতে এ চাষ করবো।চাষিরা আরও বলেন, পানিফল মৌসুমি ও অঞ্চলভিত্তিক হওয়ায় আমরা সঠিক মূল্য ও বাজার তৈরি করতে পারিনি। আমরা মনে করি, এটি দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মৌসুমি ফল বাণিজ্যিক হিসাবে ব্যাপক চাষের পাশপাশি মার্কেট তৈরি হবে। পানিফল ব্যবসায়ী অহিদুজ্জামান জানান, চাষের মৌসুম আসার আগে তিনি ১৫ জন চাষিদের মাঝে অর্থ বিনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ফলন আসার পরে বাজার দর অনুযায়ী উৎপাদিত ফল ক্রয় করেন। এভাবে ৭ থেকে ৮ বছর তিনি পানিফল ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। প্রতিদিন তিনি ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, চিটাগাং, সিলেট, রাজশাহী, বেনাপোল, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ফল রপ্তানি করেন। বর্তমান জেলার বাইরের বাজারে ৭০০- ৮০০ টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে বর্তমানে খুবই কম দরে পানিফল পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা কৃষি অফিসার শরীফ মোহাম্মদ তিতুমির জানান, লবনের প্রভাব কাটিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিকে এগিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। তবে পানি ফল কৃষি বিভাগের আওতাভূক্ত না হলেও এটি এঅঞ্চলের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিরা রেখে চলেছে। মৌসুমি এ ফলের আবাদ বাড়াতে এবং কৃষক যাতে লাভবান হয় সে ব্যাপারে কাজ চলমান রয়েছে।