ডেস্ক নিউজ: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারায় পরিবর্তন এনে আইনটি ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ নামে প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার আইনের খসড়া প্রকাশ হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির (ডিএসএ) ওয়েবসাইটে যেকোনো নাগরিক এই খসড়া আইনের ওপর ১৪ দিন পর্যন্ত মতামত দিতে পারবেন। এই আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কমাতে নয়, বরং অপরাধ কমানোর জন্য করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের আইসিটি ভবনে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ রহিতকরণ এবং প্রস্তাবিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ উপস্থাপন ও অবহিতকরণ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শুরুতে কিছু অপব্যবহার দেখতে পাই, যা আমি অকপটে স্বীকার করতে কখনই কুণ্ঠাবোধ করিনি। সে সময়ে এ আইনের অপব্যবহার রোধে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ফলে এ আইনের অপব্যবহার অনেকটাই কমে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যাপক আকারে সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ার কারণে সেটি রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে।’ এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ ও আতঙ্ক কাজ করত বলেও জানান তিনি।
সাইবার নিরাপত্তা আইনের সমালোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বুধবারের আগে নতুন আইনের খসড়া প্রকাশ করা হয়নি। ২৯ ধারায় মানহানির মামলায় কারাদণ্ড ছিল, সেটা নেই। এখন শুধু জরিমানার বিধান করা হয়েছে। ২১ ধারায় জেল ছিল ১০ বছর, এখন হয়েছে ৭ বছর। আইনের সর্ব জায়গায় দ্বিতীয়বার অপরাধ করলে যে উপধারা ছিল, সেগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। এগুলো কী পরিবর্তন না? এরপরও কেউ যদি বলে, নতুন বোতলে পুরোনো মদ। তাহলে আমাদের বলতে হবে, সমালোচনার জন্যই সমালোচনা করা হচ্ছে, জেনে বুঝে সমালোচনা করা হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। সাইবার নিরাপত্তা আইনেও ওই উদ্দেশ্য নেই। সংবিধানে বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার যে গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে তা আমরা রেখেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক ধারা অজামিনযোগ্য বলা হতো। আমরা সাইবার নিরাপত্তা আইনে প্রায় সব ধারাগুলো জামিনযোগ্য করেছি। তবে আমি এটা বলছি না যে, যেসব ধারা অজামিনযোগ্য প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর কিছু জামিনযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
সাইবার আইনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য সাইবার ক্রাইম বন্ধ করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার অপরাধী ধরা হলে ৩৭৯ ও ৩৮০ ধারার আওতায় আনতে পারব না। কারণ তিনি সশরীরে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে চুরি করেননি। তাঁকে ধরতে হলে সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন। কারণ পেনাল কোডে সশরীরে অপরাধ সংগঠনের কথা বলা আছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলার ভবিষ্যৎ কী—এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ওই সব মামলা চলা বা না চলার বিষয়ে এখনই মন্তব্য করব না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যেসব মামলা হয়েছে, সেখানে কেউ যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে যেন তাঁকে ওই আইনে সাজা না দিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাজা দেওয়ার বিষয়ে আদালত বিবেচনা করেন সেই পদক্ষেপ নেব।
সরকারি কর্মকর্তাদের সরল বিশ্বাসে কৃতকর্মের বিধান নতুন আইনে তুলে দেওয়া সরকারি চাকরি আইনের সাংঘর্ষিক কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা সরল বিশ্বাসে কাজ করেছেন বলে ডিফেন্স নিয়ে নেন, যাতে সেই ডিফেন্স নিয়ে না নিতে পারেন, সে জন্য ওই ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি চাকরি আইন বিদ্যমান আছে। আমার মনে হয় না, ওই ধারাটি তুলে দিলে সরকারি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।’
পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করার বিষয়ে আইনে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা নাগরিক অধিকার পরিপন্থী কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টেকনিক্যাল অপরাধ যেসব ধারা জামিনযোগ্য নয়, সেসব ধারায় গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করতে হবে। ওই ব্যক্তি আদালতে তার বক্তব্য দিতে পারবেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে যে, মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হবে সেই মামলায় যিনি ভুক্তভোগী হন, তার ক্ষতিপূরণ বা প্রতিকারের বিষয়ে কিছু বিধান সাইবার নিরাপত্তা আইনে রাখব।
এ সময় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সরোয়ার বলেন, আমলযোগ্য অপরাধে বিনা ওয়ারেন্টে তল্লাশি করতে পারবেন। অ-আমলযোগ্য ধারায় তল্লাশি করার কোনো সুযোগ নেই। নতুন আইনে পুলিশের ক্ষমতা অনেক কমানো হয়েছে। অ-আমলযোগ্য ধারায় আদালতের পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি করতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সচিব মো. সামসুল আরেফিন, ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির (ডিএসএ) মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।