নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরে এক ব্যবসায়ীকে ১৫ দিন ধরে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে ওই ব্যবসায়ীকে ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খানের অফিসের একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করেছে। এ সময় ওই ব্যবসায়ীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখা যায়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সাঈদ মোহাম্মদ সাদাত চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ গ্রামের মৃত সামশুল আলম চৌধুরী ছেলে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া এলাকার এএসএম মাহফুজুর রহমানের ছেলে ও ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খান।
ভুক্তভোগীর স্ত্রী ফারহানা রেজা জানান, গত এক সেপ্টেম্বর ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে কথা বলতে আমার স্বামী ভোমরা বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খানের অফিসে যান। সেখান থেকেই আমার স্বামীকে তার অফিসের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। তার ফোনটিও কেড়ে নেয় মাকসুদ খানের ম্যানেজার মহসিন হোসেন।
কি কারনে আটকে রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ঈদুল আযহার সময় আমার স্বামী মাকসুদ খানের কাছ থেকে বাকিতে ২ ট্রাক পেঁয়াজ, রসুন ও মরিজ নিয়ে কোম্পানীগঞ্জের খাতুনগঞ্জ হামিদউল্লাহ মার্কেটে বিক্রি করে। তবে ক্রয় মূল্য থেকে বিক্রয় মূল্য অনেক কম হওয়ায় তার সব টাকা পরিশোধ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে মাকসুদ খান সহ কয়েকজন আমাদের এখানে আছেন এবং সবকিছু দেখেশুনে চলে যান। এরপর থেকে আমার স্বামীর সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো। লোকসানের টাকা ব্যবসা করে কিভাবে পরিশোধ করা যায় সেজন্য গত এক সেপ্টেম্বর মাসুদ খানের সাথে কথা বলে আমার স্বামী তার সাথে দেখা করতে যায়। সেখান থেকেই আমার স্বামীকে মাকসুদ খানের অফিসের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়।
ফারহানা রেজা বলেন, আমার স্বামীর কাছ থেকে মোবাইল ফোনসহ সবকিছু তারা নিয়ে নেয়। দিনের মধ্যে কিছু সময় আমার সাথে কথা বলতে দেয়। অন্য কারো সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ দেয় না। মাকসুদ খান সাতক্ষীরাতে না থাকায় সে আসলে সমাধান হবে বলে তার মানেজার মহসিন হোসেন আমার স্বামীকে জানায়।
তিনি বলেন, দুইদিন আগে মাকসুদ খান অফিসে আসেন এবং আমার স্বামীকে অমানুষিক নির্যাতন করেন। আমি পুলিশকে ফোন দিতে চাইলে আমার স্বামী আমাকে নিষেধ করেন। তিনি আমাকে বলেন, পুলিশ আসার খবর শুনলে তারা আমাকে আরো নির্যাতন করবে। পুলিশ আমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। এ কারণে আমরা পুলিশকে জানায়নি। আজ সন্ধ্যায় জানতে পারলাম পুলিশ আমার স্বামীকে উদ্ধার করেছে।
ভোমরা প্রেসক্লাবের সভাপতি জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, গত কয়েকদিন ধরে সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খানের অফিসে এক ব্যবসায়ীকে আটকে রাখে নির্যাতন করা হয়েছে এমন গুঞ্জন শুনে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক শুক্রবার বিকালে সেখানে গিয়ে ঘটনা সত্যতা পায়। এরপর খবর পেয়ে বিজিবি ও পুলিশ এসে ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর থানায় নিয়ে গেছে।
এদিকে খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরা সদর থানায় গিয়ে জানা যায়, সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খানের ম্যানেজার মহসিন হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ী সাঈদ মোহাম্মদ সাদাত কে উদ্ধার করে থানার দ্বিতীয় তলায় রাখা হয়েছে।
সাংবাদিকরা উদ্ধার হওয়া ওই ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলতে চাইলে তাকে উদ্ধার করা এসআই সাইফুল ও এসআই হাফিজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলা যাবে না বলে জানিয়ে দেয়।
এসব বিষয় জানতে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মহিদুল ইসলাম সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি জরুরী কাজে থানার বাইরে আছি। থানায় এসে এ বিষয়ে সবার সাথে বিস্তারিত কথা বলব। তারপর বিস্তারিত বলতে পারব। ওই ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি এখন কথা বলা যাবে না বলে সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।