December 7, 2024, 3:06 pm
শিরোনামঃ
পুলিশের কাছ থেকে ছিনতাই করা আসামি গ্রেফতার ইয়াবা ট্যাবলেট সহ মাদক সিন্ডিকেটের মূলহোতা ওয়াহিদুলকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১ বোদা উপজেলায় কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নে ঘরে ঢুকে এক গৃহবধূ কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা বোদা উপজেলায় চারজন মাদক সেবীকে আটক সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে খেজুরগাছ কাটা আর গাছির অনাগ্রহে কমছে রস কালিগঞ্জে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেলো শতাধিক রোগী ডিবি পুলিশের এসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ভারত বাংলাদেশি পর্যটকদের মাধ্যমে বিশাল লাভবান হয় : সাখাওয়াত হোসেন সামাজিক সম্প্রীতির সভা সরাইলে সামাজিক সম্প্রীতির সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশী ১০ যুবক লিবিয়ায় জিম্মি, ২০ জন কারাগারে

Reporter Name
  • Update Time : Tuesday, October 3, 2023,
  • 25 Time View

ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা থেকে লিবিয়ায় নিয়ে ১০ যুবককে জিম্মি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের সুযোগ দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ বাবদ দফায় দফায় টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা। টাকা দিতে দেরি হলে কিংবা রাজি না হলে জিম্মি যুবকদের নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হচ্ছে পরিবারের কাছে।

এ ছাড়া একই চক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে নৌপথে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় মাল্টা সাগর থেকে আবারও লিবিয়া ফিরে আসা শাহাজান হোসেন, সালামিন গাজী ও শেখ আসমতসহ ২০ যুবককে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে তিন জন যথাক্রমে শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামের আবু জাফর, মানিকখালী গ্রামের নুর আমিন ও কালিঞ্চি এলাকার জাকির আলীর ছেলে।

জিম্মি অন্য যুবকরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের দেলোয়ার কয়াল, মামুন কয়াল, তারানীপুরের আবু রায়হান, বংশীপুরের মিলন, কৈখালীর আনারুল মিস্ত্রি, রহিম সরদার, মিঠু কয়াল, পূর্ব কৈখালীর জামির আলী জাম, আব্দুল কাদের ও রাসেল হোসেন। ভুক্তভোগী পরিবার, স্থানীয় একাধিক সূত্রসহ ও মানবপাচার চক্রের কয়েক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার শ্রীফলকাঠি গ্রামের হারুন-অর রশিদ, তার ভগ্নিপতি মনিরুল ইসলাম, ধুমঘাট গ্রামের সেকেন্দার ও তাদের পরিচিত মুরাদ হোসেন এ মানবপাচার চক্র গড়ে তুলেছেন। স্থানীয়ভাবে সেকেন্দারসহ কয়েকজন আত্মীয়কে দায়িত্ব দিয়ে হারুন ঢাকায় এবং মনিরুল ও মুরাদ লিবিয়ায় অবস্থান করে সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। শুরুতে আট থেকে নয় লাখ টাকায় সাগর পথে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুবকদের লিবিয়ায় নিয়ে যান তারা। পরে ভালো নৌযানে তুলে দেওয়াসহ নানা অজুহাতে আর দুই থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এ চক্রটি। পাশাপাশি অনেককে লিবিয়ায় সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি পর্যন্ত করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ নির্বিঘ্নে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে হারুন ও সেকেন্দার তাদের কাছ থেকে আট থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত টাকা নেন। পরে যুবকদের লিবিয়া নিয়ে গেলেও সাত মাসে তাদের ইতালিতে পৌঁছে দেওয়া হয়নি।

সালামিন হোসেনের বাবা আবু জাফর জানান, জমি বন্ধক দিয়ে তিন লাখসহ মাজাট গ্রামের নুর মোহাম্মদ ও প্রভাষ কর্মকারের কাছ থেকে চড়া সুদে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে মোট ৮ লাখ টাকা চক্রটিকে দেয়। অথচ ইতালিতে ছেলেকে পৌঁছে দেওয়া হয়নি। বরং গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লিবিয়ার কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তার ছেলে।

আরেক কারাবন্দি শাহাজানের বাবা নুর আমিন জানান, শেষ সম্বল চাষের জমি বিক্রি করে হারুনের ‘টোপে’ পড়ে ছেলেকে ইতালি পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন। কারাবন্দি হওয়ার পর তাকে ছাড়ানোর অজুহাতে হারুনের লোকজন এক লাখ, দেড় লাখ করে টাকা দাবি করছে। সকালে ও সন্ধ্যায় শুধু দুই বার খেতে দেওয়ার কথা জানিয়েছে তার ছেলে। এ দিকে গত কিছুদিন ধরে হারুনের মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি তা রিসিভ করছেন না।

এ দিকে জিম্মি যুবকদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে মানবপাচারকারী চক্রের প্রধান হারুন ও তার ভগ্নিপতি মনিরুলের সহায়তায় লিবিয়াতে মামুন, দেলোয়ার, আবু রায়হান, মিলন, আনারুল, আব্দুর রহিম, মিঠু, ও জামির আলী জামুকে আটকে রাখা হয়েছে। তিন দফায় ১২ থেকে সাড়ে ১৩ লাখ করে টাকা পরিশোধের পরও অতিরিক্ত টাকা দাবি করে তাদের শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে।

মামুন কয়ালের বাবা জাহার আলী কয়াল জানান, প্রায় একমাস আগে ১০ যুবকের নির্যাতনের একটি ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। সে ভিডিটিওতে বাড়ি থেকে ‘টাকা পাঠাও, টাকা পাঠাও’- এমন কাকুতি মিনতি করতে দেখা যায় মামুনসহ অন্যদের। ওই ভিডিও এলাকায় ভাইরাল হলে পাচারচক্রের সদস্যরা বেকায়দায় পড়ে জিম্মি যুবকদের দিয়ে নুতন একটি ভিডিও তৈরি করে পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। তাতে মামুনসহ অন্যদের বলতে শোনা যায়, ‘সাংবাদিক ভাই, আপনারা এ বিষয়ে কোনো নিউজ করবেন না, আমরা ভাল আছি।’

তবে মামুন ও আরও একজনের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গত সোমবার নুতন করে আরেকট একটি ভিডিও পাঠানো হয়। সেটাতে মামুনসহ অন্যদের টাকা চাইতে দেখা যায়।

রাসেলের বাবা আব্দুর রশিদ জানান, জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত করার অজুহাতে গত বুধবার প্রত্যেকের পরিবারের কাছ থেকে হারুন ও তার লোকজন মাথাপিছু এক লাখ করে টাকা আদায় করে। তার বোন ও ভগ্নিপতি মনিরুলের ভাই সেকেন্দারের বিকাশে এসব টাকা দিতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।

এ সব বিষয়ে অভিযুক্ত হারুন-অর রশিদ জানান, কয়েকজনকে গত মাসে নৌকায় তুলে দেওয়া হলেও মাল্টা সাগর উত্তাল থাকায় তারা ফিরে আসে। আর কারাগারে থাকা ২০ জনকে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

তারা কাউকে জিম্মি করেননি দাবি করে পাচার চক্রের এ হোতা আরও জানান, তার ভগ্নিপতি মনিরুলের আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েকজনকে লিবিয়ার সন্ত্রাসী আটক করে মুক্তিপণ চাচ্ছে। সেখানকার সহযোগীদের সহায়তায় জিম্মিদশা থেকে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের কেউ এখন পর্যন্ত থানায় অভিযোগ করেনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

ISO,NO-QMS/012111/0919