মোঃ রিয়াজ হোসেন,বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:- পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বরিশালে বাড়ছে অবৈধ ইটভাটা।এমনকি কয়লা ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও নামেমাত্র কয়লা রেখে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এতে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব ইটভাটা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,বরিশাল বিভাগে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৪৯২টি। আর অনিবন্ধিত ইটভাটা রয়েছে ২২৫টি। এই তথ্য নিবন্ধনের আবেদনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। তবে যারা আবেদন করেনি তারা অবৈধভাবে ইটভাটা চালালেও অবৈধ তালিকায় তাদের নাম নেই।
বরিশালের বাকেরগঞ্জের একটি ইটভাটার মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কয়লায় ইট পোড়ালে ইটের দাম বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে কাঠ পোড়াতে হচ্ছে। ইটভাটায় পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এক বছরেও পাইনি। এতে নানা জটিলতা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি না করলে ছাড়পত্র পাওয়া যায় না
বরিশালের হিজলা উপজেলায় মোট ২০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েছে ১৪টি, নেয়নি ৭ টি।অঞ্চলভিত্তিক প্রভাবশালীদের সরাসরি হস্তক্ষেপ বা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই শত শত ইটভাটা পরিবেশ ধ্বংস করে চলছে। প্রতি বছরই এই ইটভাটার সংখ্যা বেড়ছে।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নে আগে ১২টি ইটভাটা থাকলেও ২০২৩ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২৫টিতে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি ইউনিয়নে আগে ২২টি ভাটা থাকলেও বর্তমানে ৩৩টি ইটভাটা হয়েছে। সেখানে প্রকাশ্যেই পোড়ানো হয় কাঠ।
বরিশালের হিজলা উপজেলার একটি ইটভাটার মালিক ইয়াছিন মুন্সি বলেন,‘ডলার সংকটের কারণে কয়লার দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। গত বছরের শুরুতে এক মেট্রিক টন কয়লা ছিল ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে তা প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পরিবহন খরচসহ মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৩২ হাজার টাকারও বেশি। কিন্তু টাকা থাকলেও কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না।
ঝালকাঠি রাজাপুর উপজেলার আরেক ইটভাটা মালিক অভিযোগ করেন, ‘টাকা দিলে বৈধ এবং অবৈধর পার্থক্য থাকে না। যারা ঠিকভাবে টাকা দেয় না, তাদেরকে ইটভাটা বন্ধের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু পরে যোগাযোগ করলেই আবার সব ঠিক হয়ে যায়।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) বরিশাল জেলার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট লিংকন বাইন বলেন, ‘কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির কারণে বন উজাড় হচ্ছে। ফসলি জমি,গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।পরিবেশ মারাত্মভাবে হুমকির মুখে পড়ছে।কিন্তু ছাড়াপত্র দেওয়ার পরে তদারকির যে দায়িত্ব রয়েছে সেটা সঠিকভাবে পালন করছে না পরিবেশ দপ্তর।
তিনি বলেন,‘ইটভাটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ প্রতি বছরই ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। তার মধ্যে জিগজ্যাগ দেখিয়ে ইটভাটার অনুমোদন নিয়ে ড্রাম-চিমনিতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
এদিকে,বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীর এবং সংলগ্ন ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে সাবাড় করে ফেলছে সংঘবদ্ধ চক্র।এসব কারণে নদী ভাঙন তীব্র আকার দেখা দিয়েছে।বরিশাল সদর উপজেলার তালতলী,চরকাউয়ার পামের হাট এলাকায় ফসলি জমি কেটে সাবাড় করা হচ্ছে।
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিরুজ্জামান জানান,গত বছরও নদী তীরে মাটি কাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।এবারও নদী ভাঙন রোধে একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এএইচএম রাসেদ বলেন,আমাদের জনবল সংকট।তার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার।ইটভাটার সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু কে কোন ইটভাটার সঙ্গে যুক্ত সেটা মুখ্য বিষয় নয়। ছাড়পত্র ছাড়া অবৈধভাবে ইটভাটা চালানোর সুযোগ নেই। সে যেই হোক আমরা ব্যবস্থা নিবো।