দেশের প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ফাইবার অপটিকের আওতায় এসেছে। ৯৮ শতাংশের বেশি এলাকায় ফোরজি নেটওয়ার্ক সুবিধা পৌঁছে গেছে। আমরা এখন ফাইভজিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। স্পেকর্টাম নিলাম ও অন্যান্য যেসব আনুষ্ঠানিকতা দরকার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) সেগুলো করছে।
দক্ষিণ এশীয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কাউন্সিলের ২৪তম আন্তর্জাতিক সভায় মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) ডাক ও টেলিযোযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এসব কথা বলেন।
ঢাকার একটি হোটেলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও এশিয়া-প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। মঙ্গলবার সকালে তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় এখন ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে গেছে। সেখানে গড়ে ওঠেছে ই-সেন্টার। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বহু কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বহু ফ্রিল্যান্সার আয় করছে ঘরে বসেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেন করা হয়েছে। অনেক বড় পরিবর্তন এটি।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইট (ভূ-উপগ্রহকেন্দ্র) স্থাপনের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার সূচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রযুক্তির টেকসই উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হচ্ছে উল্লেখ করে শিরিন শারমিন বলেন, ‘দেশে স্মার্ট সিটি, স্মার্ট এগ্রিকালচার, স্মার্ট এনার্জী, স্মার্ট ইনস্টিটিউশন, স্মার্ট গর্ভনেন্সসহ সবক্ষেত্রে স্মার্ট সুবিধা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমার এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি।’
ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘অসাধারণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। লাঙল-জোয়ালের এই বাংলাদেশকে আধুনিক দেশ গঠনের প্রথম উদ্যোগ নেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কম্পিউটারের যুগে প্রবেশ করান। তিনি কম্পিউটারের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করে সাধারণ মানুষের হাতে হাতে কম্পিউটার পৌঁছে দেয়ার যে অসাধারণ কাজটি তিনি করেছিলেন তার ফলে আজকের বাংলাদেশ এখন আর সেই লাঙল জোয়ালের দেশ নয়। এটি এখন রূপান্তরিত দেশ।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে কাজ শুরু করে তা তিনি বাস্তবায়ন করেছেন। এটি বিশ্বের কাছে একটি দৃষ্টান্ত। এরই পথ ধরে তিনি আবার স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করে বিশ্বের কাছে বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের সোনার বাংলাকে তুলে ধরতে পারব।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, ডাক ও টেলিযোগযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, এশিয়া প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটির মহাসচিব ম্যাসানরি কন্দ প্রমুখ।
আয়োজক বাংলাদেশ এবং ভারত,পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ ও ইরানসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৯ দেশের টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান, টেলিকম অপারেটর, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের প্রায় একশজন প্রতিনিধি এতে অংশ নিয়েছেন।
১৯৯৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে দক্ষিণ এশীয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কাউন্সিলের যাত্রা শুরু হয়। এই সংস্থা বেতার তরঙ্গ সমন্বয়, স্টান্ডার্ডাইজেশন, রেগুলেটরি প্রবণতা, টেলিযোগাযোগ খাত উন্নয়নের কৌশল এবং টেলিযোগযোগ সংক্রান্ত আঞ্চলিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী সম্পর্কে কর্মকৌশল নির্ধারণ করে থাকে। সদস্য দেশগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে প্রতি বছর এ কাউন্সিলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সর্বমোট ৯ সেশন এবং দুটি গোলটেবিল বৈঠক ও দুটি ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন সেশনে টেকসই ডিজিটাল ভবিষ্যত, ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কে প্রবেশ ও গুণগতমান, ডিজিটাল অন্তর্ভূক্তি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা, স্যাটেলাইট ও টেরিস্ট্রিয়াল সেবায় তরঙ্গ ব্যবহার ও ৫জি প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক ও কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের নভেম্বরে ইরানের রাজধানীর তেহরানে ওই কাউন্সিলের ২৩তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।