জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরীক্ষায় ন্যুনতম ৩০ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য বিবেচিত হওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও সে নিয়মের তোয়াক্কা না করে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ( বশেমুরবিপ্রবি) এবার ৩০ এর কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। রোববার (১৫ অক্টোবর ২০২৩) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে নূন্যতম নম্বর ৩০ এর পরিবর্তে ২০ নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরেই উপাচার্যকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ৩০ এর কম নম্বর পাওয়া তাদের স্ত্রী-সন্তানদের পোষ্য কোটায় ভর্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করছিলেন৷ তবে শিক্ষকদের একাংশ এর বিরোধিতা করায় বিষয়টি আটকে ছিল। সর্বশেষ এ দাবি আদায়ে গত ১২ অক্টোবর কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি। এ ঘোষণার পরই ১৫ অক্টোবর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে নূন্যতম নম্বর কমানো হয়।
সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বশেমুরবিপ্রবির রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান বলেন, “এটি একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত। তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত অনুযায়ী পোষ্য কোটায় ২০শতাংশ মার্ক প্রাপ্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থিত একাধিক সদস্য জানান, “পোষ্য কোটায় ভর্তির বিষয়টি যখন উত্থাপন করা হয় তখন ৩৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৬ জন পোষ্য কোটায় ভর্তির নূন্যতম নম্বর ৩০ রাখার পক্ষে মতামত দেন, ১৫ জন পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে নম্বর ২০ করার পক্ষে মতামত দেন এবং ৪ জন পোষ্য কোটায় কোনো নম্বরের বাধ্য-বাধকতা না রেখে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই ভর্তির পক্ষে মতামত জানান।”
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৮ তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের তালিকায় নাম না থাকলে এবং ভর্তি পরীক্ষায় নূন্যতম পাস নম্বর না পেলে কোনো ভর্তিচ্ছু পোষ্য কোটায় ভর্তির জন্য বিবেচিত হবেন না। পরবর্তীতে ৩৩ তম রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উক্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাডেমিক কাউন্সিলের এক সদস্য জানান, “শিক্ষকদের একটি বড় অংশই এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা চাকরি করেন তারা তাদের শ্রমের বিনিময়ে বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন। তাহলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রম দিচ্ছেন এই কারণ দেখিয়ে তাদের সন্তানদের অন্যায্য সুবিধা কেনো প্রদান করতে হবে? তাছাড়া তারা যখন কোটায় ভর্তি হন তখন এমনিতেও তারা একটা বাড়তি সুবিধা পান। অন্য শিক্ষার্থীরা ৪৫ পেয়েও যেখানে ভর্তি হতে পারে না সেখানে তারা ৩০ এ ভর্তি হতে পারেন৷ কিন্তু যখন ৩০ এর নিচে পাওয়া শিক্ষার্থীদেরও ভর্তি নেওয়া হয় তখন ভর্তি পরীক্ষারই কোনো গুরুত্ব থাকে না।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল পোষ্য কোটায় শুধুমাত্র গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বরধারীরা ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে। একাডেমিক কাউন্সিলে আজকের এ সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনও লঙ্ঘন করেছে।”
বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব দাবি করছেন, তিনি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এবং এর আগে পরীক্ষায় ১২ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীকেও ভর্তি করানো হয়েছে।
ড.এ.কিউ.এম. মাহবুব বলেন, “প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় ফেল করা শিক্ষার্থী ভর্তি করে , কত পেয়ে ফেল? ২ পেয়ে ফেল না ৫ পেয়ে ফেল? গতবছর আমরা ১২ নম্বর পর্যন্ত নিয়েছি। তখন কেওতো কথা বলেনি! আমরা এবার ২০ নম্বর পর্যন্ত নিবো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাহলে এখন কেন কথা বলছে?”
এসময় তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী তাদের সারাটা জীবন এখানে দেয়,তাদের একটা ছেলে মেয়ে এখানে ভর্তি হবে এটা স্বাভাবিক। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। পোষ্য কোটার সিট খালি থাকার কারণে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তবে, গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “জিএসটিভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০মার্কের নিচে ফেইল নম্বর। ৩০ নম্বরের নিচে ভর্তি করানোর কোনো সুযোগ নেই। এটি গুচ্ছের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত আছে একাডেমিক কাউন্সিল সেখানে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।”
বশেমুরবিপ্রবিতে ২০শতাংশ মার্কে ভর্তির বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মিটিং এ আলোচনা হবে মিটিং এ সকল উপাচার্যগণ কমিটিতে আছেন।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবির বলেন, “ফেল করা শিক্ষার্থীদের কোটায় ভর্তির কোনো সুযোগ নেই। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ফেল করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়ে থাকলে সেটি সম্পূর্ণ অনিয়ম। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতো কোটায় এ ধরনের ভর্তি বন্ধে নীতিমালার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে।”