দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি:- সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় উৎসব হরিবাসর। এই হরিবাসরে কীর্তন গাওয়া শিখতে এসেছিলেন ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী। তবে সেই ধর্মের কর্ম শিখতে আসাই কাল হলো তার। কীর্তন দলের প্রধানের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে ওই কিশোরী।
গত শনিবার (২৬ আগষ্ট) দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে। পরে ভূক্তভোগী ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বাদী জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার বাসিন্দা।
বুধবার (৩০ আগষ্ট) মামলার প্রধান আসামী ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার শহরগাছী-হঠাৎপাড়া গ্রামের মৃত ভোলানাথ মহন্তের ছেলে দিজেন মহন্তকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি ঘোড়াঘাট কৃষ্ণ কাঙ্গাল সম্প্রদায় নামক কীর্তন দলের প্রধান।
ভূক্তভোগী কিশোরীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার দিজেন দীর্ঘদীন থেকে বিভিন্ন জেলায় হরিবাসর-কীর্তন করে বেড়ান। পাঁচবিবি উপজেলাতেও তিনি একটি হরিবাসরে গিয়েছিলেন। সেখানে ভূক্তভোগী কিশোরীর পরিবারের সাথে তার একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। ভালো সম্পর্কের সুবাদে কীর্তন শিখার ইচ্ছা পোষণ করে ওই কিশোরী।
গত মঙ্গলবার (২২ আগষ্ট) ওই কিশোরীকে তার বাড়ি থেকে বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার দুইদিন ব্যাপী চলা একটি হরিবাসর অনুষ্ঠানে নিয়ে যায় দিজেন মহন্ত। অনুষ্ঠান শেষে দিজেন তার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে ওই কিশোরীকে। গত শনিবার (২৬ আগষ্ট) দিজেনের বাড়িতে একই ঘরের আলাদা চৌকিতে ঘুমিয়ে পড়ে। একই রাতে ওই কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আসামী দিজেন।
মামলার বাদী ও ভূক্তভোগী কিশোরীর বাবা জানান, গত রবিবার (২৮ আগষ্ট) সকালে কীর্তন দলের সদ্দার তাকে মোবাইলে কল করে জানান, তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে তিনি ঘোড়াঘাটে এসে তার অসুস্থ মেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সে সময় তার মেয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন। সে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে দিনাজপুর এম.আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এরপর তার মেয়ে পরিবারকে পুরো ঘটনা খুলে বলেন।
ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মনিরুজ্জামান মুরাদ বলেন, মেয়েটি মানষিক ভাবে বেশ বিপর্যস্ত ছিল। মানুষ দেখলেই সে ভয় পেত। এছাড়াও তার শরীরে ইন্টারনাল পার্টে আঘাত ছিল। যে কারণে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়েছে।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ঘটনা জানার পরপরেই আমরা ভূক্তভোগী ওই কিশোরী এবং তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছি। ঘোড়াঘাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অসুস্থতার কারণে মেয়েটি কিছু বলতে পারছিল না। ভূক্তভোগী কিশোরী কিছুটা হওয়ার পর পুরো ঘটনা খুলে বললে তার বাবা বুধবার রাতে মামলাটি করেন। গ্রেপ্তার আসামীকে বৃৃহস্পতিবার দুপুরে দিনাজপুরের আদালতে পাঠানো হয়েছে।