December 8, 2024, 4:13 am
শিরোনামঃ
সাতক্ষীরায় জেলা গোয়েন্দা শাখার অভিযানে দুই কারারক্ষিক গ্রেপ্তার পুলিশের কাছ থেকে ছিনতাই করা আসামি গ্রেফতার ইয়াবা ট্যাবলেট সহ মাদক সিন্ডিকেটের মূলহোতা ওয়াহিদুলকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১ বোদা উপজেলায় কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নে ঘরে ঢুকে এক গৃহবধূ কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা বোদা উপজেলায় চারজন মাদক সেবীকে আটক সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে খেজুরগাছ কাটা আর গাছির অনাগ্রহে কমছে রস কালিগঞ্জে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেলো শতাধিক রোগী ডিবি পুলিশের এসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ভারত বাংলাদেশি পর্যটকদের মাধ্যমে বিশাল লাভবান হয় : সাখাওয়াত হোসেন সামাজিক সম্প্রীতির সভা

ঠাকুরগাঁওয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৫১টি ঘরের মধ্যে ১০৫টিতে থাকে না কেউ

Reporter Name
  • Update Time : Friday, August 30, 2024,
  • 16 Time View

মোঃ মজিবর রহমান শেখ :: ২০২০-২১ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কান্দরপাড়া টাঙ্গন নদের পাশে সারিসারি করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৫১টি ঘর নির্মাণ করা হয়। নাম দেয়া হয় সোনালি স্বপ্নময় আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রতিটি ঘরে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে ২ শতক জমি সহ ঘরগুলো বাসিন্দাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

এরই মধ্যে প্রকল্পের বেশ কিছু ঘরে ফাটল ধরেছে। ভূমিকম্প বা ঝড়ে ভেঙে পড়ার ভয়ে অনেকেই ঘর ছেড়ে চলে গেছেন। প্রকৃত ভূমিহীন বাছাই করতে না পারা, স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক অনিয়ম করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এছাড়া প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর এক নামে বরাদ্দ নিলেও থাকছেন অন্যরা। তাদের অভিযোগ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ও কর্মের অভাবে অনেকেই আশ্রয়ণের ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। নদী পারাপারের জন্য যে বাঁশের সাঁকো ছিল সেটিও পানির তীব্র স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আশ্রয়ণের প্রতিটি ঘরে রয়েছে ২টি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার, বিদ্যুৎ আর সুপেয় পানির ব্যবস্থাও। কিন্তু সেখানের অধিকাংশ ঘরই ফাঁকা পড়ে আছে। ১৫১টি ঘরের মধ্যে ১০৫টিই ঘরেই মানবশূন্য। আর যাঁরা থাকছেন, তাঁদের বেশির ভাগই নিজের নামে ঘরগুলো বরাদ্দ নেয়। যাদের নামে বরাদ্দ ছিল তাঁরা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখে নিরুদ্দেশ হয়েছে অনেক আগেই। তাদের রেখে যাওয়া ঘরগুলোতে অন্য বাসিন্দারা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে বসবাস শুরু করলে এখন তাঁরা এসে তাড়িয়ে দিচ্ছেন।

সরেজমিনে ঐ আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ ঘরে ঝুলছে তালা। ঝাড়জঙ্গলে ঘিরে ধরেছে ঘরগুলো। বারান্দা ও আশপাশে জমে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। কয়েকটি ঘরের জানালা-দরজা নেই। কোনও কোনো ঘরের উঠানে চলছে সবজি চাষ। বাসিন্দাদের পানি খাওয়ার জন্য টিউবওয়েল বসানো হলেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা আলম নামে এক ব্যক্তি তা খুলে নিয়ে যান। বাসিন্দারা চাইলে টাকার বিনিময়ে ফেরত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আলম ঐ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ম্যানেজার পরিচয়ে অর্থের বিনিময়ে সকাল-বিকাল ঘর পরিবর্তন করে দিচ্ছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে দেওয়া হয় হুমকি-ধামকি। তবে ঠাকুরগাঁও উপজেলা প্রশাসন বলছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের দেখভালের জন্য আলম নামে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এমনকি আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুকুরের মাছ তুলে নিয়ে খাচ্ছেন স্থানীয় কিছু দলীয় নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর প্রকৃত ভূমিহীন-ঘরহীন ব্যক্তিরা বরাদ্দ পাননি। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই যাঁদের নিজস্ব বাড়ি ও জমিজমা রয়েছে, তাঁদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেয়ে তাঁরা ঘরে থাকছেন না। ঐ আশ্রয়ণের বাসিন্দা দরবার আলী বলেন, ‘এখানের বেশিরভাগ ঘরেই লোকজন থাকেন না। ফাঁকা পড়ে আছে। আমাদের জমি নাই, ঘর নাই, তাই এখানে থাকি। কিন্তু আমাদের নামে কোনো কাগজ নাই। যারা আগে ছিল তাঁরা ৫-৬ হাজার টাকা করে বিদ্যুৎ বিল বাকি রেখে গেছে। কষ্টে আমরা পরিশোধ করেছি। এখন তাঁরা এসে বলছে, প্রতিমাসে ভাড়া দিতে হবে। ফাতেমা বেগম নামে এক বৃদ্ধা বলেন, যাদের নামে এই ঘর, তাঁরা তো থাকেন না। আমি থাকি। ঘরের মালিক মাঝেমধ্যে এসে খোঁজখবর নিয়ে যান। তাঁরা আমাকে বাইর করে দিলে আমি কোথায় থাকব।

একটা টিউবওয়েলে আমরা ৮টি পরিবার ব্যবহার করছি। তাঁর মধ্যে আদিবাসী আছে, আমাদের জন্য খুবই অসুবিধা হয়ে গেছে একটি টিউবওয়েল। জসিম বলেন, সেখানে থাকার মতো অবস্থা নেই। ঘরের জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায়। বাইরের ছেলেরা এখানে এসে নারী নিয়ে আড্ডা জমায়। এখানে যাঁদের নামে ঘর দিয়েছে, তাঁরা তো বড়লোক। এখানে থাকেন না। আমরা এখানে আছি কিন্তু আমাদের নামে কোনো কাগজ হচ্ছে না। স্থানীয় কবি ও লেখক মমেন শিং বলেন, কান্দরপাড়া আশ্রয়ণটি প্রত্যন্ত এলাকায়। দুই দিন দিয়ে টাঙ্গন নদী বয়ে গেছে। সেখানের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। তা ছাড়া সেখানে দূরের বাসিন্দাদের ঘর দেওয়া হয়েছে। সেসব ঘরে বাসিন্দারা থাকছেন না।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে কিছু লোক থাকেন না বলে শুনেছি। তাঁদের ঘরগুলো চিহ্নিত করে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের লোকজনকে তুলে দেওয়া হবে।

আর আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের যে-সব সমস্যা রয়েছে তা সরেজমিনে গিয়ে শুনে সমাধান দেওয়া হবে। যারা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করেই চলে গেছে এবং যিনি অর্থ লেনদেন করছেন তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

ISO,NO-QMS/012111/0919