২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩,নোয়াখালী প্রতিনিধি: -সারাদেশে পৌরসভা টার্মিনালের নামে চাঁদা আদায় করা যাবে না মর্মে হাইকোর্টের আদেশ থাকা শর্তেও আদেশ অমান্য করে চাটখিল পৌরসভা প্রতিদিন সকল ধরণের যানবাহন থেকে অবৈধভাবে টার্মিনালের নামে চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে। অথচ চাটখিল পৌরসভায় কোন টার্মিনালই নেই। উপজেলা আইন শৃংঙ্খলা কমিটির সভায় যানজট নিরসন প্রসঙ্গে কথা আসলে এই তথ্য বেরিয়ে আসে। এবং তথ্যের সত্যতাও খুঁজে পান উপজেলা প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভা কক্ষে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইন শৃংঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিক জসিম মাহমুদ পৌর শহরের যানজট নিরসনের ব্যাপারে প্রশাসনের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া সভায় উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, এই যানজট নিরসনের জন্য রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যানবাহন থেকে টার্মিনালের নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে তিনি দুইজনকে হাতেনাতে আটক করে তার কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। কিছুক্ষণ পরেই চাটখিল পৌর মেয়র মোঃ নিজাম উদ্দিন তাকে মুঠো ফোনে জানান, আটককৃতরা মেয়রের লোক তাদের ছেড়ে দিতে। তিনি তখন মেয়রের কাছে জানতে চান, চাঁদাবাজ কিভাবে মেয়রের লোক হয়?- মেয়র এই প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে আটককৃতদের ছেড়ে দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। এছাড়া যানজট সৃষ্টির আরেকটি কারণ, বাজারে ফুটপাত দখল করে একশ্রেনীর ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ফুটপাত ভাড়া দিয়ে রাখছে। ফুটপাত দখল মুক্ত করা হলেও যানজট নিরসন হয়ে আসবে। এসময় তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের পক্ষে এককভাবে যানজট নিরসন করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার পাশাপাশি বিষয়টি নিরসনে সাংবাদিকদেরও কলমের ভূমিকাও জরুরী। সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, চাটখিল পৌর শহরে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার সিএনজি ও ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার প্রতিটি থেকে ১০টাকা হারে, ৩২টি লেগুনার প্রতিটি থেকে ২০টাকা হারে, ৪০টি জননী বাসের (মিনি বাস) প্রতিটি থেকে ২০টাকা হারে, শতাধিক পিকাপ ভ্যানের প্রতিটি থেকে ৩০টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও সোনাইমুড়ী থেকে রামগঞ্জ আবার রামগঞ্জ থেকে সোনাইমুড়ী গামী যে কোন যানবাহন চাটখিল পৌর শহর পারাপার থেকে একই হারে চাঁদা দিতে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাটখিল-সোমপাড়া রুটের এক লেগুনা চালক জানান, পৌর সভার নামে ২০ টাকা, থানার টিআইও এর নামে ৩০ টাকা ও লাইনম্যানের নামে ৩০ টাকা সহ মোট ৮০টাকা হারে দৈনিক চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়া সিএনজি, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চালক ও পিকাপ-ভ্যান, জননী বাস চালকেরা জানান, পৌরসভা ছাড়াও চাটখিল থেকে নোয়াখালী সদরে যেতে পথে পথে পৌরসভা, মালিক-শ্রমিক, থানা সহ বিভিন্ন নামে-বেনামে চাঁদা আদায় করে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব চাঁদা দেওয়ার ফলে চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
এব্যাপারে চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া’র সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, পৌর শহরের যানজটের কারণে পরীক্ষার্থীরা যথাসময়ে কেন্দ্রে যেতে পারে না। রোগীদের হাসপাতালে যথা সময়ে পৌঁছানো যায় না, অনেক সময় যথা সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারার কারণে মৃত্যুর সংবাদও আসে। তাছাড়াও উপজেলার ৯ ইউনিয়ন থেকে সাধারন জনগন বিভিন্ন সেবার জন্য উপজেলা সদরে আসতে হয়। কিন্তু যানজটের কারণে যথাসময়ে সেবা গ্রহন করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, পৌর শহরের যানজন নিরসনের দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। পৌর কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক কোন সহযোগিতা চাইলে উপজেলা প্রশাসন তা করতে পারে। এর বেশি কিছু আমাদের করার নেই।
চাটখিল পৌর মেয়র মোঃ নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের বারবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে পৌর সচিব মোঃ আলতাফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি, বিষয়টি নিয়ে পরে আলাপ করবেন বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।